আমড়া...আমড়া....মিস্টি আমড়া, বরিশালের আমড়া। সড়ক কিংবা রেলপথে রওয়ানা হলে হকারদের এসব শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে মাঝরাত পর্যন্ত চলে ওদের ডাকাডাকি। কিছুটা বিরক্ত লাগে। তবে কাঠিতে বসানো আমড়া নিয়ে যখন আশেপাশে ছুটাছুটি করে তখন জিবে জল রাখা দায়। ফলগুলোকে ওরা বিশেষভাবে কেটে পরিবেশন করে। দেখতে দারুণ। এক বিশেষ আকর্ষণ। মনে হবে, এ যেন শিল্পীর কারুকাজ। লুফে নিতে ইচ্ছে করবে বার বার।

আমড়া বাঙালির অতিপ্রিয় একটি ফলের নাম। টক-মিষ্টি মিশ্রণে ভিন্ন এক স্বাদ। পাকলে হলুদ রঙ ধারণ করে। তাই একে গোল্ডেন আপেলও বলা হয়। আমড়ার সিংহভাগ কাঁচা খাওয়া হলেও ভর্তা, আচার, চাটনি আর পরিপক্ব ফল দিয়ে তৈরি করা যায় জুস, জেলি এবং মোরব্বা। আমড়া সারা দেশেই চাষ করা যায়। তবে দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানির জন্য এর ফলন ও গুণগতমান কাঙ্ক্ষিত হয়। আর তাই বরিশালের আমড়া সারা দেশে নামকরা।


প্রসিদ্ধ হিসেবে সবাই বরিশালের আমড়া বললেও আসলে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠিকে (নেছারাবাদ) আমড়ার রাজধানী বলা যায়। ঝালকাঠি, বরিশাল, ভোলা এবং বরগুনায়ও আমড়া ভালো জন্মে।সুস্বাদু এই ফলের চাহিদার বেশির ভাগই পূরণ হচ্ছে ঝালকাঠি থেকে।

প্রতিদিনই জেলার ভাসমান হাটে বিক্রি হচ্ছে আমড়া। এ হাট থেকে সারাদেশে সরবরাহ করা হয় পুষ্টিকর এ ফল।এর মধ্যে ভিমরুলী গ্রামের ভাসমান হাটটি সবচেয়ে বড়। এখান থেকে আমড়া কিনে সরবরাহ করা হয় সারা দেশে। ১৮শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে এ সুস্বাদু আমড়া


প্রতি বছর বরিশাল অঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার ৭১ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ হয়েছিল। যার মধ্যে বরিশালে ৩৫৩ হেক্টর, ঝালকাঠিতে ৫৯১ হেক্টর, পিরোজপুরে ৪৯৩ হেক্টর, পটুয়াখালীতে ২৫৯ হেক্টর, বরগুনায় ২০৫ হেক্টর এবং ভোলায় ১৭০ হেক্টর। উপজেলাওয়ারী সর্বোচ্চ জমির পরিমাণ ঝালকঠির সদর এবং রাজাপুরে। দুই উপজেলাতে ২৬০ হেক্টর করে। চলতি বছরে চাষের পরিমাণ বেড়েছে।
নেছারাবাদের (স্বরূপকাঠি) উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রিফাত শিকদার জানান, গতবার তার উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৪৭৫ টন আমড়া উৎপাদন হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৫২ হেক্টর জমিতে ১৭ টন হারে ফলন পাবেন বলে আশা করেন
তবে বরিশাল অঞ্চলে উৎপাদিত আমড়া সবার সেরা। ফলনও হয় প্রচুর। সারা দেশে উৎপাদিত আমড়ার এক-তৃতীয়াংশের জোগান আসে এ অঞ্চল থেকে। সব দিক বিবেচনায় দক্ষিণাঞ্চলের এ অর্থকরী ফলটি সবার মন জয় করেছে।

আমড়ায় পুষ্টিগুণে টইটম্বুর। ভিটামিন-সি’র পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণ লৌহ। লৌহের অভাবে আমাদের রক্তস্বল্পতার সৃষ্টি হয়। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় এ উপসর্গ দেখা দেয় না। অভাব বেশি হলেই কেবল শারীরিক দূর্বলতা, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, ঘন ঘন অসুস্থতা এসবের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তখন বড়দের কর্মক্ষমতা কমে যায়। অপরদিকে শিশুদের মস্তিষ্ক হয় বাঁধাপ্রাপ্ত। ফলে স্কুলের পড়া সহজে শিখতে পারে না। অথচ বাচ্চাসহ বড়রা লৌহসমৃদ্ধ অন্য খাবারের পাশাপাশি আমড়া খেলে এসব সমস্যা এড়ানো সম্ভব। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, এর প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে (আহারোপযোগী) শর্করা ১৫ গ্রাম, আমিষ ১ দশমিক  ১ গ্রাম, চর্বি ০ দশমিক  ১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০ দশমিক  ৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫৫ মিলিগ্রাম, লৌহ ৩ দশমিক  ৯ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৮০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-‘বি১’ ১০ দশমিক  ২৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-‘বি২’ ০ দশমিক  ০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-‘সি’ ৯২ মিলিগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬৬ কিলোক্যালরি।
সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল আমড়া। টক-মিষ্টি স্বাদের ফলটি কমবেশি সবারই প্রিয়। দেশীয় এ ফল নির্দিষ্ট মৌসুমে পাওয়া যায় প্রায় দেশজুড়েই।