About Barisal

বি.এম কলেজ, বরিশাল।


ব্রজমোহন কলেজ বা বি.এম কলেজ বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।বাংলাদেশে বেশ কিছু প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ব্রজমোহন কলেজ অন্যতম। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত এবং নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর অপর নাম বি, এম কলেজ। বরিশাল বিভাগের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় কলেজ এটি। এই কলেজটি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত।
১৮৫৩ সালে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে নবজাগরণ শুরু হয় তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালের তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশচন্দ্র দত্তের অনুরোধে ১৮৮৯ সালের ১৪ জুন অশ্বিনী কুমার দত্ত তাঁর বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে সত্য, প্রেম, পবিত্রতার মহান আদর্শে ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বি এম স্কুল ক্যাম্পাসে ব্রজমোহন কলেজ স্থাপন করেন। এই কলেজ যখন স্থাপন করা হয়, তখন এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। এই কলেজটির পড়াশুনার মান খুবই ভাল ছিল। একে অনেকেই দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড নামে ডাকত।

যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন এর অধ্যক্ষ ছিলেন বাবু জ্ঞান চন্দ্র চৌধুরী। অশ্বিনীকুমার দত্ত ইংরেজি এবং যুক্তিবিদ্যা পড়াতেন। কালীপ্রসন্ন ঘোষ পড়াতেন ইতিহাস। কামিনী কুমার বিদ্যারত্ন পড়াতেন বাংলা এবং সংস্কৃতি। ১৮৮৯ সালেই এই কলেজ প্রথম শ্রেণির কলেজে রুপান্তরিত হয়। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত বি এম স্কুল প্রাঙ্গণে এই কলেজের কাজ হত। ১৯১৭ সালে এটি নিজেদের প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে।
১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ছিল বি এম কলেজের স্বর্ণযুগ।প্রথমে ইংরেজি এবং দর্শন কোর্স শুরু হয়। এরপর ১৯২৫ সালে গনিত, রসায়ন ১৯২৮ সালে এবং অর্থনীতি ১৯২৯ সালে। ১৯২২ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এই কলেজের সোনালি সময় বলা হয়।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর এই কলেজ শিক্ষক এবং ছাত্র সংকটে পরে। এই সময়ে অনেক বিষয় এই কলেজ থেকে বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৬৪ সালে অর্থনীতি আবার পুনরায় পড়ানো শুরু হয়। এবং এরপর অনেক বিষয় আবার পুনরায় চালু হয়। ১৯৬৫ সালের পর সময়টাকে বলা কলেজের সমৃদ্ধির সময়। তৎকালীন অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ হানিফকে বলা হয় আধুনিক ব্রজমোহন কলেজের স্থপতি।


১৯৬৪ সালে ব্রজমোহন কলেজে পুনরায় অর্থনীতিতে অনার্স কোর্স খোলা হয়। ১৯৬৫ সালের ১ জুলাই কলেজটি প্রাদেশিকীকরণ অর্থাৎ সরকারিকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১৮ আগস্ট বিএম কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে (১৯৭১-৭২ শিক্ষাবর্ষে) সরকারি ব্রজমোহন কলেজে বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা এই সাতটি বিষয়ে অনার্স এবং বাংলা, অর্থনীতি, ইতিহাস ও রসায়ন এই চারটি বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স খোলা হয়। ১৯৭৫ সালে ইতিহাসে অনার্স কোর্স চালু করা হয়। ১৯৮৯ সালে ইংরেজি ও মৃত্তিকাবিজ্ঞানে মাস্ট্রার্স ১ম পর্ব এবং ১৯০০ সালে ইংরেজি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, গণিত, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান-এই সাতটি বিষয়ে অনার্স আর গণিতের মাস্টার্স ১ম পর্ব এবং ১৯৯০ সালে ইংরেজি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, গণিত, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান-এই সাতটি বিষয়ে অনার্স আর গণিতের মাস্টার্স ১ম পর্ব পাঠ্যক্রম চালু করা হয। ১৯৮৯ সালের ১৪ জুন ব্রজমোহন কলেজের শতবর্ষ পূর্ণ হয় এবং ১৯৯২ সালের ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর কলেজের শতবর্ষপূর্তি উৎসব উদযাপিত হয়। ১৯৯৩ সালে সমাজকল্যাণে এবং ১৯৯৪ সালে ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি, দর্শন, সমাজ বিজ্ঞান প্রাণিবিজ্ঞান ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানে মাস্টার্স পাঠ্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৯৫ সালে সমাজকল্যাণে এবং দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষে ইসলামি শিক্ষায় মাস্টার্স কোর্সে খোলা হয়।

বর্তমানে ২০ টি ডিগ্রী পাস কোর্স, ১৮ টি সম্মান কোর্স, ১৯ টি মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। আশা করা যায় খুব সামনেই এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হবে। এখানে ৪ টি ফ্যাকাল্টির অধীনে ২২টি ডিপার্টমেন্ট রয়েছে।
১। কলা অনুষদ
  • বাংলা বিভাগ
  • ইংরেজি বিভাগ
  • ইতিহাস বিভাগ
  • দর্শন বিভাগ
  • ইসলাম শিক্ষা বিভাগ
  • ইসলামি ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিভাগ
  • সংস্কৃতি বিভাগ
২। ব্যবসায়ি শিক্ষা অনুষদঃ
  • ফিনান্স এবং ব্যাংকিং বিভাগ
  • হিসাববিজ্ঞান এবং তথ্য পদ্ধতি বিভাগ
  • মার্কেটিং বিভাগ
  • ব্যবস্থাপনা বিভাগ
৩। বিজ্ঞান অনুষদ
  • উদ্ভিদতত্ত্ব বিভাগ
  • রসায়ন বিভাগ
  • গনিত বিভাগ
  • পদার্থ বিভাগ
  • মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ
  • পরিসংখ্যান বিভাগ
  • প্রাণীবিদ্যা বিভাগ
৪। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ
  • অর্থনীতি বিভাগ
  • সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
  • রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
  • সামাজিক কাজ বিভাগ

ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দের তালিকা

বেসরকারি আমল (১৪ জুন, ১৯৮৯-৩০ জনু, ১৯৬৫)
১. জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী (১৮৮৯-১৮৯০); ২. ব্রজেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (১৮৯০-১৯০৩); ৩. রনজীকান্ত গুহ (১৯০৩-১৯১১); ৪. নৃত্যলাল মুখার্জী (১৯১১-১৯২১); ৫. কালী প্রসন্ন গোষ (১৯২১-১৯২৩ ভারপ্রাপ্ত); ৬. অতুলকৃষ্ণ ঘোষ (১৯২৩-১৯২৪); ৭. সতীশচন্দ্র চ্যাটার্জী (১৯২৪-১৯৩৮); ৮. শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ (১৯৩৮-১৯৪১); ৯. চিন্তাহরণ রায় (২৭.০৫.১৯৪১-১০.০৯.১৯৪২ ভারপ্রাপ্ত); ১০. সুরেশ চন্দ্র সেনগুপ্ত (১০.০৯.১৯৪২-২৬.১০.১৯৪৯); ১১. নীলরতন মুখার্জী (২৭.১০.১৯৪৯-১৬.০২.১৯৫২); ১২. ই এফ ম্যাক ইনার্নি (১৭.০২.১৯৫২-২৬.০৭.১৯৫৫); ১৩. সাজ্জাদ আলী (২৭.০৭.১৯৫৫-২৩.০৮.১৯৫৬ ভারপ্রাপ্ত); ১৪. ডি এন চ্যাটার্জী (২৪.০৮.১৯৫৬-১০.০৮.১৯৫৮ ভারপ্রাপ্ত); ১৫. ইয়াকুব আলী (১১.০৮.১৯৫৮-২০.০৪.১৯৫৯); ১৬. ডি এন চ্যাটার্জী (২১.০৪.১৯৫৯-২১.০৫.১৯৫৯ ভারপ্রাপ্ত); ১৭. এ কে এম কবির চৌধুরী (২১.০৫.১৯৫৯-০৩.০১.১৯৬২); ১৮. কাজী গোলাম কাদির (০৩.০১.১৯৬২-২২.০২.১৯৬২ ভারপ্রাপ্ত); ১৯. মেসবাহুল বার চৌধুরী (২৩.০২.১৯৬২-৩০.০৬.১৯৬৫)।
সরকারি আমল (১ জুলাই ১৯৬৫ থেকে --)
১. মেসবাহুল বার চৌধুরী (০১.০৭.১৯৬৫-৩১.০১.১৯৬৬ ভারপ্রাপ্ত); ২. ড. হারুন-অর-রশিদ (০১.০২.১৯৬৬-০৭.০৯.১৯৬৮); ৩. মোঃ আবু সুফিয়ান (০৮.০৯.১৯৬৮-০৬.০৪.১৯৭০); ৪. মোঃ আবদুল মতিন (০৭.০৪.১৯৭০-১৩.০৬.১৯৭২); ৫. এ কে এম ইমদাদুল হক মজুমদার (১৪.০৬.১৯৭২-০৭.০৯.১৯৭৬); ৬. মোঃ মোসলেম মিয়া (০৭.০৯.১৯৭৬-১১-০৯.১৯৭৬ ভারপ্রাপ্ত); ৬. প্রফেসর আনোয়ার-উল-ইসলাম (১১.০৯.১৯৭৬-০৫-০৮-১৯৮০); ৭. নাসির উদ্দিন মিয়া (০৬.০৮.১৯৮০-২৮-০৯-১৯৮০ ভারপ্রাপ্ত); ৮. ড. হারুন-অর-রশিদ (২৯.০৯.১৯৮০-২৯-১০-১৯৮০); ৯. নাসির উদ্দীন মিয়া (৩০.১০.১৯৮০-৩১.১২.১৯৮০ ভারপ্রাপ্ত); ১০. কাজী আইউব আলী (০১.০১.১৯৮১-২৪.০১.১৯৮২ ভারপ্রাপ্ত); ১১. প্রফেসর মোঃ ইউনুস মিয়া (২৫.০১.১৯৮২-০৩.১১.১৯৮৩); ১২. প্রফেসর মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম খান (০৪.১১.১৯৮৩-১১.১২.১৯৮৩ ভারপ্রাপ্ত); ১৩. প্রফেসর মুহাম্মদ শামসুর রহমান (১২.১২.১৯৮৩-০৮.০৬.১৯৮৫); ১৪. প্রফেসর মুহাম্মদ মকবুল উদ্দিন আহমেদ (১০.০১.১৯৮৬-২৪.০১.১৯৮৬ ভারপ্রাপ্ত); ১৫. প্রফেসর মোঃ শামসুদ্দিন আহমেদ (২৫.০১.১৯৮৬-২৯.১১.১৯৮৮); ১৬. প্রফেসর চিত্তরঞ্জন গুহ রায় (২৯.১১.১৯৮৮-০৭.১২.১৯৮৮ ভারপ্রাপ্ত); ১৭. প্রফেসর মোঃ হানিফ (০৮.১২.১৯৮৮-৩০.১২.১৯৯২); ১৮. প্রফেসর মোহাম্মদ ইছহাক উদ্দিন মিয়া (৩০.১২.১৯৯২-০২.০১.১৯৯৩ ভারপ্রাপ্ত); ১৯. প্রফেসর মুহাম্মদ মকবুল উদ্দিন আহমেদ (০২.০১.১৯৯৩-২১.১১.১৯৯৫); ২০. প্রফেসর মোঃ শাহজাহান খান (২১.১১.১৯৯৫-১৩.০৬.১৯৯৬); ২১. প্রফেসর সাইদুল ইসলাম (১৩.০৬.১৯৯৬-১৬.০৬.১৯৯৭ ভারপ্রাপ্ত); ২২. প্রফেসর সাইদুল ইসলাম (১৬.০৮.১৯৯৭-২৫.০৪.১৯৯৯); ২৩. প্রফেসর শচীন্দ্রনাথ মজুমদার (২৫.০৪.১৯৯৯-২৩.০৫.১৯৯৯ ভারপ্রাপ্ত); ২৪. প্রফেসর শচীন্দ্রনাথ মজুমদার (২৫.০৪.১৯৯৯-২৩.০৫.১৯৯৯ ভারপ্রাপ্ত); ২৫. প্রফেসর এ কে এম সৈয়দ আবদুর রাজ্জাক (২৩.০৫.১৯৯৯-১৩.০১.২০০১); ২৬. হেমায়েত হোসেইন খান (১৩.০১.২০০১-১৯.০৩.২০০১ ভারপ্রাপ্ত); ২৭. মোঃ ইউসুফ আলী খান (৩০.০৪.২০০১-০৭.০৫.২০০১ ভারপ্রাপ্ত); ২৮. এ বি এম শাহজাহান কাজী (০৭.০৫.২০০১-২৩.০৮.২০০১ ভারপ্রাপ্ত); ২৯. প্রফেসর মোঃ নুরুল আনোয়ার (২৩.০৮.২০০১-৩০.১২.২০০৩); ৩০. প্রফেসর মোহাম্মদ নুরুল হক (৩০.১২.২০০৩-১৯.০১.২০০৫); ৩১. মোঃ ইউসুফ আলী খান (১৯.০১.২০০৫-২২.০৬.২০০৫); ৩২. প্রফেসর মাকসুদা বেগম (২২.০৬.২০০৫-০৬.০৯.২০০৫ ভারপ্রাপ্ত); ৩৩. প্রফেসর মোঃ নাজিম উদ্দিন (০৬.০৯.২০০৫-০৪.০১.২০০৭); ৩৪. প্রফেসর মোঃ মোস্তফা কামালউদ্দিন (০৫.০১.২০০৭-২৯.০৭.২০০৭); ৩৫. প্রফেসর মোঃ গোলাম মোস্তফা (২৯.০৭.২০০৭-৩১.০৭.২০০৭ ভারপ্রাপ্ত); ৩৬. প্রফেসর ড. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ (৩১.০৭.২০০৭-০৪.০২.২০০৯); ৩৭. প্রফেরস ড. মোঃ আবদুস ছাত্তার মজুমদার (০৪.০২.২০০৯-০৮.০২.২০০৯ ভারপ্রাপ্ত); ৩৮. প্রফেসর ড. ননী গোপাল দাস (০৮.০২.২০০৯-২০১২); ৩৯. প্রফেসর মহম্মদ ফজলুল হক (২০১৩- আমাদের গৌরব এই বিদ্যাপীঠটিকে জ্ঞান সাধনায় তার পূর্ব ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নেয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।

Post a Comment

0 Comments