About Barisal

ভিমরুলি ভাসমান পেয়ারা বাজার, ঝালকাঠি, বরিশাল


পেয়ারার জন্য দেশব্যাপী এর খ্যাতি। এজন্য গ্রামের নাম ছাপিয়ে এর পরিচিতি পেয়ারার গ্রাম বলে। পিরোজপুর জেলার
স্বরূপকাঠী থানা সদর থেকে ৮ কি.মি. পূর্ব দিকে এই গ্রামের অবস্থান। যেখানে মাইলের পর মাইল রয়েছে কেবল পেয়ারার
বাগান। এখানের সিংহভাগ বাসিন্দার আয়ের একমাত্র উৎস এই পেয়ার। যা বাংলার আপেল বলে খ্যাত। পেয়ারার
মৌসুমে এই জনপদের ব্যস্ততা চোখে পড়ারমত। দূর দূরান্ত  এলাকা থেকে পাইকার আসে। বরিশাল ছাপিয়ে ফরিদপুর
হয়ে রাজধানীসহ দেশের অনান্য অঞ্চলেও পৌঁছে যায় এখানের পেয়ারা। ফি বছরের ন্যায় এবারেও একই চিত্র বিরজমান
এই জনপদে। অ্যানথ্রোকনোজ (ছিটরোগ) নেই মোটেও, ফলন ভালো, এবং দরও বেশ। তবে রমজান চলে আসায় কিছুটা
শঙ্কিত এখানের চাষিরা। বিশেষ করে পেয়ারাবাগান সৃজন কালে ঋণ নিয়েছিলেন মহাজনের কাছ থেকে। তারপরও সবকিছু
ছাপিয়ে এবারে বরিশাল বিভাগের ৩ উপজেলার প্রায় দুই হাজারাধিক পেয়ারা চাষী অনেকটা নিরুদ্বেগ দিন কাটাচ্ছেন।
পত্তির কথাঃ কবে এইজনপদে পেয়ারার চাষ শুরু হয়েছিল তানিয়ে দুটি মত প্রচলিত এখানে। শ্রুতি অনুযায়ী তা প্রায়
দুই শতাধিক বছর আগের কথা। তীর্থ করতে এখানের কোন একজন ভারতের  বিহার রাজ্যের গয়াতে গিয়েছিলেন।
সেখানে এই ফল দেখে চাষ সম্পর্কে অবগত হয়ে বীজ এনে বপন করেছিলেন আটঘর- কুড়িয়ানাতে। গয়া থেকে আনা
বীজ বপন করে গাছ এবং গাছ থেকে ফল পাবার পর, এর নাম রাখা হয়েছিল গয়া। সেখান থেকে অপভ্রশং হয়ে
স্থানীয়রা এখন এই ফলকে গইয়া নামে ডাকেন। উৎপত্তির অপর কাহিনী সম্পর্কে আটঘর গ্রামের প্রবীণ পেয়ারা চাষী
নিখিল মন্ডল জানালেন, আন্দাকুল গ্রামের পূর্ণচন্দ্র মন্ডল কাশীতে তীর্থ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে সর্বপ্রথম
তিনিই পেয়ারার বীজ নিয়ে আসেন এই এলাকায়। সেই বীজ থেকে যেসব গাছ উৎপন্ন হয়েছে এবং ঐ গাছে উৎপাদিত
পেয়ারা এখনো পূণ্যমন্ডলী পেয়ারা নামে পরিচিতি। এই পেয়ারাটির গায়ে কমলালেবুর মত শির আঁকা আছে। খেতে
বেশ সুস্বাদু, ভেতরে লালচে ধরণের এবং সুগন্ধিযুক্ত। এই হিসেব অনুযায়ী প্রায় পৌঁনে দুইশ বছরের কাছাকাছি হতে
পারে এখানের পেয়ারা চাষের বয়স। পূণ্যচন্দ্র মন্ডলের নাতি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্মল চন্দ্র মন্ডল (৮০) জানালেন,
তার পিতার লাগানো শতাধিক বছরের পুরানো বাগান এখনো বিদ্যমান।

যেভাবে হয় পেয়ারার চাষঃ  সাধারণত নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় পেয়ারা চাষ হয়ে থাকে। বীজ থেকে চারা উৎপন্ন
করে কান্দি কেটে আট হাত দূরত্বে, একত্রে দুটো করে চারা লাগানো হয়। তিনবছরের মধ্যে গাছে ফল ধরে। এই গাছ
একশো থেকে সোয়াশো বছর বেঁচে থাকে এবং মুত্যুর আগ পর্যন্ত ফল দেয়। প্রতি বছর দুই বার করে বাগান নিড়াতে
হয়। অগ্রহায়ণ পৌষ মাসে মাটির প্রলেপ দিতে হয় সব কান্দিতে। ফাল্গুন মাসের দখিণা বাতাস বহার সাথে সাথে গাছে
নতুন পাতা গজাতে থাকে। ফাল্গুন এবং চৈত্র এই দুইমাসে ফুল থেকে ফল বের হয়। পহেলা শ্রাবণ থেকে পূর্ণাঙ্গ ফল
পাড়তে শুরু করেন চাষীরা। শ্রাবণ মাসের পুরোটা সময় প্রতিদিনই পেয়ারা সংগ্রহ করতে পারেন। বিশেষ করে পুরানো
গাছের ফুল দেরিতে আসে বলে ফলও দেরিতে হয়। তবে পুরানো গাছের পেয়ারা, চারা গাছের পেয়ারার চেয়ে বেশী
সুস্বাদু হয়।

কোথায় কি খাবেন:
ভিমরুলি বাজার থেকে সাদা ও লাল মিস্টি, কুড়িয়ানা বাজারে ঋতুপর্ণা দোকানের গরম মিস্টি ও বৌদির হোটেলে দুপুরের
খাবার এবং গুঠিয়ার সন্দেস। এছাড়া বরিশাল শহরের পুরান বাজার এলাকার হক এর রসমালাই কিংবা রসোগোল্লা
কিংবা ছানা।বটতলা এলাকার শশীর রসমালাই, নয়াবাজার মোড়ের নিতাই মিস্টান্ন ভান্ডারের স্পঞ্জ মিস্টি। বিবি
পুকুর পাড়ের চটপটি, দধি ঘরের দই, ঘোল এবং ঘোল মুড়ি মিক্সড খেতে পারেন।

কিভাবে যাওয়া যায়:
জেলা সদর থেকে বাস এবং লঞ্চ যোগে নেছারাবাদ উপজেলা পরিষদের সামনে বাস ষ্টান্ড। পাইলট স্কুলের মসজিদ ঘাট
থেকে ট্রলার যোগে ৫কি:মি: অথবা মাইক্রো/জীপ/অটো/ইজি বাইক/টেম্পু/মটর সাইকেল যোগে কুড়িয়ানা বাজার।
কুড়িয়ানা বাজারের পার্শ্ববতী সমগ্র এলাকায় পেয়ারা চাষ হয়ে থাকে।

Post a Comment

0 Comments