About Barisal

কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ী

ভারত উপমহাদেশে মুঘলদের আমল থেকে ব্রিটিশদের শাসন আমল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা চালু ছিল। জমিদারি প্রথা এখন বিলুপ্ত। তবে এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের স্মৃতিবিজড়িত অনেক নিদর্শন। তেমনই একটি প্রাচীনতম জনপদের নিদর্শন ‘কীর্তিপাশার জমিদার বাড়ি’।
এটি ঝালকাঠি সদর উপজেলার কীর্তিপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত। বাড়িটি ঝালকাঠি সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রাজা কীর্তি নারায়ণের নাম অনুসারে এলাকাটির নাম হয় কীর্তিপাশা।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় একশত বছর আগে কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিক্রমপুর জমিদারের বংশধরের কিছু অংশ প্রায় ১৯ শতকের শেষ সময়ে ঝালকাঠি জেলার কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯ শতকের প্রথমদিকে বিক্রমপুর জমিদার বংশের রাজা রাম সেনগুপ্ত এই কীর্তিপাশা গ্রামে আসেন। এখানে তিনি তার দুই ছেলের জন্য দুইটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বড় ছেলের জন্য পূর্ব বাড়ি; যা ছিল ১০ আনা বড় হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। আর ছোট ছেলের জন্য নির্মাণ করেন পূর্ব বাড়ি; যা ৬ আনা ছোট হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল।
ছোট ছেলের জমিদার বাড়ি অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আর বড় ছেলের জমিদার বাড়ির কিছু অংশ এখনো টিকে আছে। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে কীর্তিপাশা জমিদারপুত্র রাজকুমারকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। স্ত্রী নিজেকে সতী প্রমাণ করতে স্বামীর সঙ্গে জ্বলন্ত শ্মশানে সহমরণে যান। স্বামীভক্তির নিদর্শন সহমরণ সমাধিটি এখন ধ্বংসের পথে। এখানে এখনো একটি নাট মন্দির, হল ঘর, ছোট ও বড় মন্দির আছে। এই জমিদার বংশের দু’জন বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেন রোহিনী রায় চৌধুরী ও তপন রায় চৌধুরী।
বর্তমানে জমিদার বাড়ির একটি অংশে রয়েছে শতবর্ষের পুরাতন প্রসন্ন কুমার মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মূল জমিদার বাড়ি এবং দুর্গামন্দির এখন পরিত্যক্ত হয়ে আগাছায় পূর্ণ হয়ে আছে। নাট্যশালার চিহ্ন এখনো রয়েছে। মঞ্চের গ্রিনরুম এবং হলরুমে পুনর্বাসিত হয়েছে বালিকা বিদ্যালয়। রোহিনী রায় চৌধুরীর সমাধিটি নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।
দর্শনীয় স্থান হিসেবে কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি অনেক দিন ধরে পরিচিত। এছাড়া দেখার মত আরো অনেক কীর্ত্তি রয়েছে এখানে। একটি স্বতীদাহ প্রথার সমাধী এবং জমিদার প্রসন্ন কুমার রায় চৌধুরীর সমাধী মন্দির, একটি শিব মন্দির। এগুলো দেখতে প্রতিবছর অনেক মানুষ এখানে ভ্রমণে আসেন।
যেভাবে যাবেন:
ঝালকাঠী থেকে অটো বা মটরবাইক অথবা অন্য যেকোনো যানবাহনে করে কীত্তিপাশা যাওয়া যায়। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস মোড় হতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অটোরিক্সায় গেলে কীর্তি পাশা বাজার। বাজার থেকে ২-৩ মিনিট পায়ে হেটে গেলেই পাওয়া যাবে ‘কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ী’।

Post a Comment

0 Comments