বরিশালের ঐতিহ্যবাহী নানান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিদর্শনের মধ্যে দূর্গা সাগর একটি অন্যতম স্থান।দুর্গাসাগর হল, বাংলাদেশের দক্ষিণে বরিশাল জেলার অন্তর্গত একটি বৃহৎ দিঘী।বরিশাল শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরে বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কের জেলা বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশায় স্থানীয় জনগণের পানি সঙ্কট নিরসনে ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে এ দীঘিটি খনন করেন চন্দ্রদ্বীপের পরগনার তৎকালীন রাজা শিব নারায়ন। স্ত্রী রানী দূর্গাবতী একবারে যতদূর পর্যন্ত হেঁটে গিয়েছিলেন ততদূর পর্যন্ত এ দীঘি খনন করা হয়।শুধু জলাভূমির আকার ২৭ একর। পার্শবর্তী পাড় ও জমি সহ মোট আয়তন ৪৫.৪২ একর।


দুর্গাসাগরের চারপাশে বিশাল সিমেন্টের প্রশস্ত চারটি ঘাটলা।পশ্চিম পাড়ে ঘাট সংলগ্ন স্থানে রয়েছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো। ইচ্ছা করলে ভ্রমণকারীরা এখানে রাত কাটাতে পারেন। ও মাঝখানে প্রায় ৬০ শতাংশ ভূমির উপর একটি সুন্দর দ্বীপ। দুর্গাসাগরে দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষন মাঝখানের এই দ্বীপটির সৌন্দর্য।বাতাসের বেগ একটু বেশি হলেই দুর্গাসাগরে ঢেউ ওঠে।এসব ঢেউয়ে ভেসে ওঠে পাড়ের বৃক্ষরাজির ছায়া।এছাড়া দীঘির চারপাশ দিয়ে ১.৬ কিলোমিটার হাঁটার রাস্তা রয়েছে। পাড়টি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১৪৯০ ফুট এবং প্রশস্ত পূর্ব-পশ্চিমে ১৩৬০ ফুট।যা এ দীঘির সৌন্দর্য আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে তুলেছেস্বাধীনতা উত্তরকালে ১৯৭৪ সালে দীঘিটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়।তখনকার জেলা বোর্ড ১২০০ টাকা ব্যয় করে দিঘীটি পরিষ্কার করে। সে সময়েই দীঘির মাঝামাঝি স্থানে অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ছোট দ্বীপের ন্যায় তৈরি করা হয়। দীঘির চারপাশে নারিকেল, সুপারি, শিশু, মেহগনি প্রভৃতি বৃক্ষ রোপন করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। যা বর্তমানে দীঘিটির শোভা বর্ধন করেছে। দীঘির চারপাশে বাঁধানো রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিনোদনের নতুন মাত্রা খুঁজে পায় প্রকৃতিপ্রেমীরা। আর চিরচেনা গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে এ দীঘি যেন গ্রামীণ নিঃসর্গে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া।স্থানীয়ভাবে এটি মাধবপাশা দিঘী নামে পরিচিত।



দীঘির পশ্চিমে শ্রীপুর, পূর্বে কলাডেমা, উত্তরে পাংশা এবং দক্ষিণে শোলনা ও ফুলতলা গ্রাম। চার গ্রামের মধ্যস্থানে এক শুভদিনে হাজার হাজার লোক দীঘি খনন কাজ শুরু করেন। চন্দ্র দ্বীপ রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম হতে প্রজারা দীঘি খননে অংশ নেয়। দীঘি খনন কাজ শেষ করতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগে। সারাদিন কাজ করে শ্রমিকরা পশ্চিম পাশে একটি দীঘিতে মাটি কাটার যন্ত্র ধুতেন। এ দীঘির নাম দেয়া হয় কোদাল দীঘি। দীঘি খনন ও অর্চনার জন্য রাণী রাজকোষ হতে তিন লাখ টাকা ব্যয় করেন। চারপাশে পঞ্চাশ ফুট বিস্তৃত চারটি পাকা ঘাট নির্মাণ করেন।



প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার পাশাপাশি উৎপাদনমুখী হওয়ার লক্ষ্যে বর্তমানে বরিশালের দূর্গাসাগর পাড়ের বাগানে বিচরণ করছে তিনটি হরিণ।দিঘীর দ্বীপটিকে আকর্ষণীয় করতে সেখানে রাখা হয়েছে কৃত্রিম বাঘ। এছাড়া পর্যটকদের বিনোদনে দিঘীতে চলাচল করছে নৌকাও। শীতকালে এখানে অতিথি পাখির সমাগম হয়। যেখানে শীতকালে অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। পাখিদের অভয়ারণ্য এই এলাকা। চৈত্রমাসের অষ্টমী তিথীতে হিন্দু ধর্মালম্বীরা এখানে পবিত্র স্নানের উদ্দেশ্যে সমবেত হন।দীঘির পারে সরু রাস্তা , মাঝে মাঝে বসার বেঞ্চ , ঘন সবুজ বিভিন্ন ধরনের গাছ – আপনাকে দিবে অনাবিল শান্তি। ইচ্ছে করলে আপনি এখানে পিকনিক করতেও পারেন। যারা বরিশালে আসবেন , এই দূর্গা সাগর দেখতে ভুলবেন না। মৎস্য শিকারিরাও এখানে আস্তে পারেন – বিশাল আকৃতির মাছ ধরার জন্য । বছরের কোন এক সময় – টিকিট কেটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ আছে এখানে।