About Barisal

মনপুরা দ্বীপ

মনপুরা যেন মায়ায় ঘেরা এক দ্বীপ। কর্মব্যস্ত জীবন থেকে পালিয়ে মনকে শান্তির ছোঁয়া দিতে সেখানে ছুটে যাওয়া যায় যে কোনো সময়। 

দ্বীপটি গত কয়েক বছর ধরে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই দ্বীপটি ভোলা জেলা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। মেঘনা নদীর কোলে বেড়ে উঠা দ্বীপটিতে রয়েছে সবুজের সমারোহ। কুয়াকাটার সঙ্গে এই দ্বীপের দারুণ মিল রয়েছে। কুয়াকাটাতে যেমন সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখতে পাবেন, ঠিক তেমনি মনপুরা এসেও আপনি প্রতক্ষ করতে পারবেন। এখানে সকাল বেলায় সূর্য যেমন হাসতে হাসতে পূর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেলেও আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়। আবার রাতে হাতছানি দেয় দ্বীপের এক ভিন্ন রূপ। যেন ঘোমটা জড়ানো বধূর মত নিস্তব্ধতায় ছেয়ে যায় পুরো দ্বীপ।
মনপুরার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির সারি সারি বাগান। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি জায়গাটিকে পরিণত করেছে সবুজের সমারোহে। মনপুরা দ্বীপের আশেপাশে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। এসব চরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে এসব চরাঞ্চল। চরগুলোর মধ্যে অন্যতম- চর তাজাম্মুল, চর পাতালিয়া, চর পিয়াল, চর নিজাম, চর সামসুদ্দিন, ঢাল চর, কলাতলীর চর। প্রত্যেকটি চরের রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। চরগুলোই যেন মনপুরার অলঙ্কার!

ল্যান্ডিং স্টেশন, হরিণের অভয়াশ্রম ও চৌধুরী প্রজেক্ট মনপুরায়। ল্যান্ডিং স্টেশনটি নদীর ৫০০ মিটার ভেতরে তৈরী করা। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু পর্যটকরা না, স্থানীয়রাও সময় কাটাতে আসে এখানে। রাতে এখানে বসলে মনে হবে, আপনি মেঘনা নদীর গভীরে ভাসছেন। কারণ তখন আপনার চারদিকে থাকবে পানি আর আপনি বসে থাকবেন পানির সামান্য উপরে। নদীর পানির স্রোত আর ঢেউয়ে মাঝে মাঝে স্টেশনটি কেঁপে উঠে, তখন মনে হবে এই বুঝি নদীতে ভেসে গেলাম।
এখানে এসে আপনি সাক্ষাৎ পেতে পারেন হরিণ দলের! এখানে রয়েছে একটি হরিণের অভয়াশ্রম। জোয়ারের সময় হরিণগুলো প্রধান সড়কের কাছে চলে আসে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হরিণের পাল যখন রাস্তা পার হয় তখন তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। অতিথি পাখির উড়ে বেড়ানো, হরিণের পালের ছোটাছুটি, সুবিশাল নদীর বুক চিরে ছুটে চলা জেলে নৌকা, ঘুরে বেড়ানো মহিষের পাল আর আকাশ ছোঁয়া কেওড়া বাগান কঠিন হৃদয়ের মানুষেরও মন ছুঁয়ে যায়। চারদিকে নদীবেষ্টিত মনপুরায় নৌকা কিংবা সাম্পানের ছপছপ দাঁড় টানার শব্দ আর দেশি-বিদেশি জাহাজের হুঁইসেলের শব্দ মিলেমিশে একাকার হলে মনে হয় কোনো দক্ষ সানাইবাদক আর তবলচির মন ভোলানো যুদ্ধ চলছে।
খাসি পাঙ্গাস, মহিষের দুধের কাঁচা দই ও শীতের হাঁস-এই তিনটি খাবার মনপুরার বেশ জনপ্রিয়। এ দ্বীপের প্রধান যানবাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল। এছাড়া সাইক্লিং করার জন্য এই দ্বীপ খুবই উপযোগী। কখনো সবুজের রাজ্য আবার কখনো উত্তাল মেঘনা নদী রাস্তার পাশে রেখে মনপুরা দ্বীপে সাইক্লিং করার মজাই আলাদা।

দিকনির্দেশনা
মনপুরা দ্বীপে যাওয়ার একমাত্র বাহন হচ্ছে লঞ্চ। ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি ফারহান-৩ এবং ৪ নামে দুটি লঞ্চ প্রতিদিন বিকাল ৫ টায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটের মধ্যে মনপুরা দ্বীপে পৌঁছায়। লঞ্চের ডেকে চড়ে যেতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৩৫০ টাকা। সময় লাগবে ১২/১৩ ঘণ্টা। এছাড়া ঢাকা কিংবা বরিশাল থেকে ভোলা হয়ে তজুমদ্দিন ঘাটের সি-ট্রাকে মনপুরা যাওয়া যায়। সি-ট্রাকটি তজুমদ্দিন থেকে ছাড়ে প্রতিদিন বিকাল ৩ টায় আর মনপুরা থেকে ছাড়ে সকাল ১০ টায়।
এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এ নদীপথটি বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় এই রুটে তখন লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকে। মনপুরা দ্বীপে রাত্রি যাপনের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানের (সরকারি ডাকবাংলো, কারিতাস বাংলো এবং প্রেসক্লাব বাংলো) ডাকবাংলো আছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় এই বাংলোগুলোতে থাকতে পারবেন।  এছাড়া দু-তিনটা আবাসিক হোটেলও রয়েছে।

Post a Comment

0 Comments